বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অমর কৌতুকাভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনের শেষ অসমাপ্ত চলচ্চিত্র The Freak—এর চিত্রনাট্য এবার বই আকারে প্রকাশিত হচ্ছে। ১৯৭৭ সালে ৮৮ বছর বয়সে মৃত্যুর আগে তিনি ছবিটি নিয়ে কাজ করছিলেন। পাণ্ডুলিপি, স্টোরিবোর্ড ও স্কেচ জোড়া লাগিয়ে ‘The Freak: The Story of an Unfinished Film’ নামে বইটি প্রকাশ করছে স্টিকিং প্লেস বুকস।
ব্রিটিশ প্রকাশক পল ক্রোনিন জানান, চ্যাপলিন এই ছবিতে তার মতোই এক ‘বহিরাগত’ কিংবদন্তি চরিত্র সৃষ্টি করেছিলেন—এক ডানাওয়ালা নারী, সারাফা, যার ক্ষমতা ছিল রোগ সারিয়ে তোলা ও পৃথিবীতে শান্তি আনা। চ্যাপলিন নিজেই এই চরিত্রকে “মানব-দেহের পাখি” হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।
চ্যাপলিন ছবিটিতে একটি ক্যামিও চরিত্রে অভিনয়ের পরিকল্পনাও করেছিলেন—লন্ডনের আকাশে সারাফাকে উড়তে দেখে বিস্মিত এক মাতাল হিসেবে।
চ্যাপলিন আর্কাইভ অনুযায়ী, The Freak নিয়ে তার কাজ অন্য যেকোনো ছবির তুলনায় আরও বিস্তারিত ছিল—দৃশ্যবিন্যাস, বিশেষ প্রভাবের নোট, সারাফার ডানার নকশা, শুটিং সূচি ও বাজেট পরিকল্পনাসহ পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি তখন প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল।
ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি তার কন্যা ভিক্টোরিয়াকে বেছে নেন। ভিক্টোরিয়া জানান—চ্যাপলিন মাসের পর মাস পাখিদের চালচলন পর্যবেক্ষণ করতেন, উড়ার ভঙ্গিমা শেখার চেষ্টা করতেন। কিন্তু সেই সময়ের প্রযুক্তি তাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। “সময় তাকে থামিয়ে দেয়,” বলেন ভিক্টোরিয়া।
এর আগে ২০২০ সালে সিনেটেকা দি বলোনিয়া ইতালীয় ভাষায় সীমিত সংস্করণ প্রকাশ করেছিল। তবে এবারই প্রথম ইংরেজিতে মূল রূপে প্রকাশিত হচ্ছে চিত্রনাট্যটি। বইটি সম্পাদনা করেছেন সিনেটেকা দি বলোনিয়ার সেসিলিয়া সেনসিয়ারেলা, চ্যাপলিন পরিবারের সহযোগিতায়।
বইটিতে রয়েছে চ্যাপলিনের ‘গোপনীয়’ কাস্টিং নোট—প্রধান চরিত্রের জন্য রবার্ট ভন, জেমস ফক্স ও রিচার্ড চেম্বারলেইনের নাম উল্লেখ ছিল। গল্পে একজন ইংরেজ অধ্যাপক তার ছাদের ওপর আহত সারাফাকে খুঁজে পান এবং তার সঙ্গী হয়ে ওঠেন। এক স্থানে সারাফা বলেন—“আমি আমার ডানা ঘৃণা করি… মানুষ আমাকে দেখে ভয় পায়, আমি মানুষকে।”
১৯৬৯ সালে লন্ডনে থেকে চ্যাপলিন বিশেষ প্রভাব বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে উড়ন্ত দৃশ্যের শুটিং নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিলেন। শিল্পী জেরাল্ড লার্নের তৈরি ১৫০টি স্কেচও বইটিতে যুক্ত হয়েছে। লার্ন বলেন, “চ্যাপলিন অত্যন্ত বিস্তারিত নির্দেশ দিতেন। প্রকল্পটি কঠিন ছিল, কিন্তু অসম্ভব নয়।”
বইটির লেখক চ্যাপলিনের অফিসিয়াল জীবনীকার ডেভিড রবিনসনের ভাষ্য—“ছবিটি শেষ না হওয়া দুঃখজনক; কারণ এটি অসাধারণ একটি চলচ্চিত্র হতে পারত।”