যেভাবে প্রথম রঙিন টেলিভিশন কিনেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ

নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের আজ জন্মদিন। বাংলা সাহিত্যে ও বিনোদনে তার অবদান যতটা গভীর, তার ব্যক্তিজীবনও ততটাই গল্পে ভরা। লেখালেখির শুরু থেকেই তিনি পাঠকদের মোহিত করেছেন; জীবনের ঘটনাগুলোও যেন তার উপন্যাসের মতোই নাটকীয়।

১৯৭২ সালে ‘নন্দিত নরকে’ দিয়ে আত্মপ্রকাশের পর অল্প সময়ের মধ্যেই ‘শঙ্খনীল কারাগার’সহ একের পর এক শ্রেষ্ঠ রচনা তাকে বাংলা সাহিত্যে দৃঢ় অবস্থান এনে দেয়। পরে বিটিভির জন্য লেখা নাটক তাকে মধ্যবিত্তের ঘরে ঘরে পরিচিত করে তোলে। ‘প্রথম প্রহর’ থেকে শুরু করে ‘এইসব দিনরাত্রি’—তার নাটকগুলো এখনও দর্শকদের মুগ্ধ করে।

১৯৮৩ সালে প্রচারিত ‘এইসব দিনরাত্রি’ তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যায়। ধারাবাহিকটির চরিত্র ‘টুনি’র মৃত্যু দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছিল। বহু বছর পর হুমায়ূন নিজেও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালে মারা যান—সেই স্মৃতি এখনও ভক্তদের ভারাক্রান্ত করে।

হুমায়ূন আহমেদের আত্মজৈবনিক বই বলপয়েন্ট-এ তার প্রথম রঙিন টেলিভিশন কেনার গল্পটি সবচেয়ে মানবিক ও হৃদয়স্পর্শী। তিনি লিখেছেন—তখন তাদের বাসায় টিভি ছিল না, মেয়েরা পাশের ফ্ল্যাটে গিয়ে বিটিভি দেখত। একদিন অতিথি থাকায় ফ্ল্যাটে ঢুকতে না পেরে বাচ্চারা মন খারাপ করে ফিরে আসে। এতে স্ত্রীও ক্ষুব্ধ হন—“এ দেশে এসে আমরা কী পেলাম?”

সেদিন রাতের খাবার টেবিলে বড় মেয়ে বলেছিল, “বাবা, তুমি আমাদের একটা রঙিন টিভি কিনে দেবে?”
হুমায়ূন উত্তর দিয়েছিলেন—“অবশ্যই দেব।”
কিন্তু কবে? সেই জবাব তার জানা ছিল না।

ঠিক তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন—এমন একটি কাজ করতে হবে, যার আয়ে রঙিন টিভি কেনা যাবে। বিটিভির নওয়াজীশ আলী খান ধারাবাহিক নাটক লেখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। হুমায়ূন সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেন একটি লক্ষ্য নিয়েই—রঙিন টিভি কেনা। সেই লক্ষ্যেই তিনি লেখেন ‘এইসব দিনরাত্রি’।

নাটকটি প্রচার হওয়ার পর এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন—প্রেরণা কী ছিল? হুমায়ূন নির্দ্বিধায় বলেছিলেন—“অর্থ উপার্জন। আমার রঙিন টিভি দরকার ছিল।”

এই মন্তব্যে অভিনেতা আবুল খায়েরসহ অনেকেই কষ্ট পান। পরে হুমায়ূন তাকে বাসায় ডেকে বলেন—“আপনি অভিনয়ের জন্য টাকা নিয়েছেন; আমিও লেখা’র জন্য নিয়েছি। লেখক চাঁদের আলো খেয়ে বাঁচে না—তার প্রোটিন লাগে, কার্বোহাইড্রেট লাগে।”

এরপর তিনি আবুল খায়েরকে তার বাচ্চাদের রঙিন টিভি দেখার দৃশ্য দেখান। খায়েরের চোখে পানি চলে আসে। তিনি হুমায়ূনকে ক্ষমা চান। সেই দিন থেকেই দুজনের বন্ধুত্ব মৃত্যু পর্যন্ত অটুট থাকে।

হুমায়ূন আহমেদের জীবন, সাহিত্য ও মানবিকতার এই গল্পটি আজও তার ভক্তদের গভীরভাবে ছুঁয়ে যায়—যেভাবে তার লেখাও আজো পাঠকদের কাছে সমান অর্থবহ।

Facebook
Twitter
Telegram
LinkedIn
WhatsApp
সর্বশেষ

হংকংয়ের ওয়াং ফুক কোর্ট অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক মানুষের প্রাণহানির পর শহরজুড়ে তিন দিনের…

কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়ার ‘শ্যাডো ফ্লিট’ হিসেবে পরিচিত দুটি তেলবাহী ট্যাংকারে ড্রোন হামলার দায় স্বীকার করেছে…

বাংলাদেশে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সীমান্তে মজুদ থাকা অন্তত ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ…

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় নিহতের সংখ্যা ৭০ হাজার ১০০ জনে পৌঁছেছে। শনিবার…

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার আকাশসীমা ‘সম্পূর্ণ বন্ধ’ বলে বিবেচনা করতে এয়ারলাইন্স ও পাইলটদের সতর্ক…

আরো পড়ুন