যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার আকাশসীমা ‘সম্পূর্ণ বন্ধ’ বলে বিবেচনা করতে এয়ারলাইন্স ও পাইলটদের সতর্ক করার পর কারাকাস এটিকে ‘ঔপনিবেশিক হুমকি’ বলে আখ্যায়িত করেছে। ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, এটি দেশের জনগণের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অবৈধ, অতিরঞ্জিত ও অন্যায্য আরেকটি আগ্রাসন’।
আইনগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেনেজুয়েলার আকাশসীমা বন্ধের ক্ষমতা নেই। তবে ট্রাম্পের পোস্টের ফলে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচলে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে এবং এয়ারলাইন্সগুলো ওই অঞ্চলে ফ্লাইট পরিচালনায় নিরুৎসাহিত হতে পারে।
ট্রাম্প ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লিখেছেন—সব এয়ারলাইন্স, পাইলট, মাদক কারবারি ও মানব পাচারকারীদের সতর্ক করছি—ভেনেজুয়েলার ওপর ও আশপাশের আকাশসীমা সম্পূর্ণ বন্ধ হিসেবে দেখুন। এ বিষয়ে বিবিসির জিজ্ঞাসায় হোয়াইট হাউস কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। এর আগে মার্কিন এফএএ ওই এলাকায় ‘ব্যাপক সামরিক কার্যক্রম’ নিয়ে সতর্কতা জারি করেছিল।
‘মাদকবিরোধী অভিযান’-এর নাম করে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবাহী রণতরী ‘ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড’সহ প্রায় ১৫ হাজার সেনা ভেনেজুয়েলার কাছে মোতায়েন—১৯৮৯ সালের পানামা আক্রমণের পর অঞ্চলটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সমাবেশ।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের মাদকবিরোধী দাবি নাকচ করে বলছেন, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্যই এই সামরিক চাপ। সরকারের অভিযোগ—গত বছরের নির্বাচনে মাদুরোর বিজয় যুক্তরাষ্ট্র মেনে নিতে পারেনি, তাই সামরিক শক্তির প্রদর্শন চলছে।
ট্রাম্প আরও বলেছেন, ভেনেজুয়েলাভিত্তিক মাদক পাচার ঠেকাতে ‘স্থল পর্যায়ে’ যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা দ্রুত শুরু হবে। মার্কিন বাহিনী ইতোমধ্যে নৌযান লক্ষ্য করে ২১টি হামলা চালিয়েছে—৮০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে নৌকাগুলোতে মাদক ছিল, যদিও তারা কোনো প্রমাণ দেয়নি।
ভেনেজুয়েলা অভিযোগ করেছে, যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে তাদের সাপ্তাহিক অভিবাসী প্রত্যাবাসন ফ্লাইট স্থগিত করেছে। দেশটি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলকে এই ‘অনৈতিক আগ্রাসনের’ বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা অমান্য করায় সরকার ছয়টি বড় আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স—আইবেরিয়া, ট্যাপ পর্তুগাল, গোল, ল্যাটাম, এভিয়ানকা এবং টার্কিশ এয়ারলাইন্সের অবতরণ নিষিদ্ধ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ‘কার্টেল ডি লস সোলস’ বা ‘কার্টেল অফ দ্য সানস’-কে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। ওয়াশিংটনের দাবি—এই কার্টেলের নেতৃত্বে আছেন প্রেসিডেন্ট মাদুরো নিজেই, এবং এটি ভেনেজুয়েলার সামরিক, গোয়েন্দা, আইনসভা ও বিচারব্যবস্থাকে দুর্নীতিগ্রস্ত করেছে।
কারাকাস এসব অভিযোগ ‘কঠোরভাবে’ প্রত্যাখ্যান করেছে। অভিযুক্তদের একজন, স্বরাষ্ট্র ও বিচারমন্ত্রী দিওসদাদো কাবেলো বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের দাবিকে ‘সম্পূর্ণ বানোয়াট’ বলে আসছেন।