সরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারণকে “বোকার কাজ” এবং “নির্বুদ্ধিতা” হিসেবে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তার মতে, দেশে বহু সংস্কার হয়, কিন্তু জনগণ বাস্তব সুফল পায় না—বাজারকে বাজারের মতো চলতে দেওয়া উচিত।
শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ) আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ‘কৃষি ও খাদ্যে রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ শীর্ষক সেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
সভায় বিএজেএফ সভাপতি সাহানোয়ার সাইদ শাহীনের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক আবু খালিদ সঞ্চালনা করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী।
আমীর খসরু বলেন, “কৃষিতে উন্নতি হয়েছে, কিন্তু বিপ্লব হয়নি। কৃষকের ফসলের দামে সরকার হস্তক্ষেপ করছে—এটাই সবচেয়ে ভুল সিদ্ধান্ত। কৃষককে সহায়তা করতে হলে সরাসরি বিনিয়োগ, লজিস্টিকস ও বাজারসংযোগ বাড়াতে হবে; মূল্য নিয়ন্ত্রণ নয়।”
খাদ্য আমদানিনির্ভরতা নিয়ে তিনি সতর্ক করেন—“আমদানি নির্ভর থাকলে বৈশ্বিক রাজনীতির শিকার হতে হবে। কোনো দেশ হঠাৎ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়, কেউ ট্যারিফ বাড়ায়। তাই খাদ্যে আত্মনির্ভরতার জন্য অঞ্চলভিত্তিক ফলন ম্যাপিং জরুরি—কোথায় কোন ফসল উৎপাদন হবে তার পরিকল্পনা করতে হবে।”
নীতির দুর্বল বাস্তবায়নকে বড় সংকট হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, “নীতির অভাব নেই—অভাব বাস্তবায়নের। কৃষকের ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়া ঠেকাতে প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। কৃষিতে প্রযুক্তি ও বিনিয়োগও অপরিহার্য।”
কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গে তিনি জানান—দেশে সবচেয়ে বড় কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র এখনো কৃষি। “আমরা ১৮ মাসে এক কোটি কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নিয়েছি—এতে কৃষিই প্রধান ভূমিকা রাখবে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে কৃষিকে রপ্তানিমুখী সেক্টরে রূপান্তর করা হবে।”
গ্রামীণ অর্থনীতি ও মূল্যশৃঙ্খলে ইন্টিগ্রেশনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “শুধু কৃষক নয়—গ্রামের কামার, কুমোর, কারিগরও বাজারে ভালো দাম পান না। তাই কৃষি ও গ্রামীণ উৎপাদনকে বৈশ্বিক বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। সরকার, খাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ও এনজিও একত্রে কাজ করলে কৃষিতে বড় ধরনের বিপ্লব সম্ভব।”
বর্তমান অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা বিরোধী দলে থাকলেও উন্নয়ন নিয়ে কথা বলব। দেশের বেশিরভাগ রিফর্ম বিএনপির সময়েই হয়েছে। গণতান্ত্রিক সরকার না থাকলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি টেকসই হয় না।”
চার দিনব্যাপী এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের কো-স্পন্সর আস্থা ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং সহযোগী হিসেবে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে।